নীলফামারীতে নির্বাচনী সহিংসতায় নি;হ;ত বিজিবি সদস্য রু;বেল মণ্ডলের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চলছে শো;কে;র মা;তম। ছেলের কবর ছুঁয়ে শুধু অঝোরে কাঁদছেন বাবা নজরুল ইসলাম।
ছেলের টাকায় মাসদুয়েক আগে কেনা পারিবারিক কবরস্থানে ছেলেকে নিজ হাতে দা;ফ;ন করতে হয়েছে তাকে। এ দৃশ্য তাকে বারবার কাঁদাচ্ছে তিনি বারবার বলছিলেন, এখন সে আর আব্বা বলে ডাকবে না। ভিডিও কলেও দেখতে চাইবে না। রুবেলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার শোকে পাথর। তার চিন্তা এখন শিশু ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের বেইগুনী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম মণ্ডল (৬০)। সংসারে এক ছেলে রুবেল মণ্ডল ও মেয়ে নাইস আক্তার।
রুবেল বগুড়ার সোনাতলাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরের বিজিবিতে যোগ দেন। ছেলে বিজিবিতে যোগদানের পরে সংসারে আশার আলো দেখেন কৃষক নজরুল ইসলাম। মেয়ে নাইস আক্তারকে উপজেলার কোচারশহর গ্রামের শাহিন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেন।
সংসারে যখন একটু সচ্ছলতা আসা শুরু হয় তখন পাশের গ্রামের মেয়ে জেসমিন আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় রুবেলের। রুবেলের দুই সন্তান।
ছেলে রাফিউরের বয়স ১২ বছর। মেয়ে রাফিয়া আক্তার রিয়ার বয়স সাত। গত ২৮ নভেম্বর নীলফামারীর গাড়ামারা ইউপি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শেষে জাতীয় পার্টির পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মারুফ হোসেনের সমর্থকদের হা;মলা;য় নি;হ;ত হন বিজিবি সদস্য রুবেল।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নি;হ;ত রুবেলের বাবা নজরুল ইসলাম হার্টের রোগী। মাস দুয়েক আগে বাবার অনুরোধে পারি;বারিক কব;রস্থানের জন্য জ;মি কেনেন রুবেল।
বাবা নজরুল ইসলাম চেয়েছিলেন তিনি মা;রা গেলে নিজের কেনা জমিতে যাতে তাকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ওই জমিতে বাবার আগেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রুবেল। এ ঘটনা বারবার কাঁ;দাচ্ছে নজরুল ইসলামকে। প্রতিদিন কবরে এসে মাটিতে হাত বুলিয়ে ছেলের স্পর্শ অনুভব করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে।
ছেলের কব;রের মাটিতে হাত রেখে নজরুল ইসলাম চোখের পানি ফেলে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। আমি হার্ডের রোগী, ছেলে আমার চিকিৎসা করাচ্ছিল।
এখন আমার আর কিছু নেই। ছেলেই নেই কার কাছে আর টাকা চাবো? ছেলেটা ভরসা ছিল। এখন আর আমার কোনো ভরসা নেই। আমাকে আব্বা বলার কেউ নেই। কেউ আর বলবে না, ‘আব্বা, দূরে যাও। ভিডিও কলে দেখি’।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পারিবারিক কব;র;স্থান ছিল না। তাই ছেলের দেওয়া টাকায় আগে বাড়ি পাকা না করে কবরস্থানের জায়গা কিনি। জায়গা কেনার দুই মাস পরে সেই জায়গায় ছেলেকে করব দিতে হলো। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে? আমি দোয়া করি ছেলে যেন জান্নাত পায়।’
রুবেলের মা রুলি বেগম বলেন, ‘কষ্টে আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার চাই। আমার একটাই ছেলে ছিল। ওই ছিল পরিবারের ভরসা। এখন আমার নাতি-পুঁতি নিয়ে কিভাবে চলবে, জানি না।’
স্বামীর ছবি বুকে নিয়ে দাম্পত্যজীবরের সুখময় স্মৃতিগুলো ভেবে কেঁদে কেঁদে পাথর স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তিনি বারবার স্বামীর পোশাকগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলেন। নাবালক দুই শিশুর ভবিষ্যৎ আরও ভাবিয়ে তুলেছে তাকে।
জেসমিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করে মানুষ করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগে স্বামী আমাদের ছেরে চলে গেল। এখন আমার পরিবারের পাশে কে থাকবে? কে দেখবে আমার ছেলেমেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়িকে? সরকার যদি আমার পরিবারের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তাহলে আমি তাদের নিয়ে বাঁচতে পারবো।’
এদিকে বিজিবি সদস্য রু;বেল মণ্ডল নি;হ;তে;র পর তার বাড়িতে এসে স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। পাশাপাশি পরিবারটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবির ল্যান্সনা;য়েক পদে কর্মরত ছিলেন নির্বাচনী স;হিং;সতায় নি;হত রু;বেল মণ্ডল। ঘটনার পরদিন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের বেইগুনী গ্রামে তার দা;ফন সম্প;ন্ন করা হয়।